গ্রামীণ সাহিত্য আমাদের শেকড়, আর নগর সাহিত্য আমাদের আধুনিকতা।
- আপডেট সময় : ০১:৩৯:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 61
মাঈন উদ্দিন সরকারঃ
বাংলা সাহিত্য বহুমাত্রিক। এর ভেতরে যেমন গ্রামীণ জীবনের সরলতা, তেমনি আছে নগর জীবনের জটিলতা। সাহিত্য মূলত মানুষের জীবনকে তুলে ধরে—তাই মানুষ যেখানে থাকে, যেভাবে বাঁচে, সেই জীবনধারা সাহিত্যেও প্রতিফলিত হয়।
গ্রামীণ সাহিত্য মূলত বাংলার গ্রামজীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এখানে কৃষক, মেঠোপথ, নদী, খাল-বিল, খেতখামার, গ্রামীণ সংস্কৃতি, লোকাচার, দুঃখ-কষ্ট ও সংগ্রাম চিত্রিত হয়। গ্রামীণ সাহিত্যে প্রকৃতির উপস্থিতি খুবই প্রবল। জসীমউদ্দীনের নকশী কাঁথার মাঠ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এছাড়া লোকসাহিত্য, বাউল গান, জারি-সারি, কবিগান ইত্যাদি গ্রামীণ সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
নগর সাহিত্য শহুরে জীবনের প্রতিচ্ছবি। এখানে মানুষের মানসিক দ্বন্দ্ব, শিল্পায়ন, রাজনীতি, শ্রেণিবৈষম্য, প্রেম, একাকিত্ব এবং আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা ফুটে ওঠে। নগর সাহিত্য বিশ্লেষণধর্মী, অনেক সময় দার্শনিক এবং জটিল সম্পর্ককেন্দ্রিক। হুমায়ূন আহমেদ, সেলিনা হোসেন কিংবা শহীদুল জহিরের লেখায় আমরা নগর জীবনের এই চিত্র পাই।
গ্রামীণ সাহিত্য সরল, আবেগপ্রবণ এবং প্রকৃতিনির্ভর। নগর সাহিত্য জটিল, বিশ্লেষণধর্মী এবং আধুনিক সমস্যাভিত্তিক। তবে দু’টি ধারার লক্ষ্য একই—মানুষের জীবন ও সত্যকে তুলে ধরা।
সাহিত্য কখনো শুধু গ্রামীণ বা শুধু নগরজীবনকে আঁকড়ে থাকে না। বরং সাহিত্য মানুষের সামগ্রিক অভিজ্ঞতা থেকে শক্তি পায়। গ্রামীণ সাহিত্য আমাদের শেকড়কে মনে করিয়ে দেয়, আর নগর সাহিত্য আমাদের বর্তমান ও আধুনিকতার বাস্তবতা তুলে ধরে। তাই উভয় ধারাই বাংলা সাহিত্যের সমান গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরিশেষে বলতে হয়,গ্রামীণ সাহিত্য আমাদের শেকড়, আর নগর সাহিত্য আমাদের আধুনিকতা।
লেখকঃ মাঈন উদ্দিন সরকার
বি.এ অনার্স,এম.এ মাস্টার্স ( বাংলা বিভাগ)




