বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর ফেনীতে দেশের সবচেয়ে বেশি ৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
টানা তাপপ্রবাহের ভোগান্তির পর সামান্য বৃষ্টির দেখা পেয়েছে রাজধানীবাসী; তাতে তাপ কিছুটা কমলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কয়েকদিন লাগবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঢাকার আকাশজুড়ে কালো মেঘ, সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তাতে গত কয়েক দিনের সেদ্ধ হওয়ার দশা থেকে রেহাই মিললেও দুপুর পর্যন্ত গরম ছিল বেশ। বিকালে এক ঝলক হওয়ায় তাপমাত্রা আরও একটু কমলেও ঝুম বৃষ্টির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাপমাত্রা কমার বিষয়টি নির্ভর করে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ার ওপর।
“এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তাপপ্রবাহ চলছে। ফলে মাটির উপরিভাগ গরম হয়ে আছে। এই বৃষ্টিটা যদি ১-২ দিন ধরে টানা চলত, তাহলে সারফেসে পানি জমে ঠাণ্ডা হত।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর ফেনীতে দেশের সবচেয়ে বেশি ৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
নাজমুল হক বলেন, “শনিবারের পর থেকে ঢাকায় ভারি বৃষ্টি শুরুর সম্ভাবনা থাকলেও শহরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হতে আরও ৩ থেকে ৫ দিন সময় লাগবে। আর সারাদেশের বেলায় লাগবে ৭-৮ দিন।”
বৃহস্পতিবার নীলফামারীর সৈয়দপুরে দেশের সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আগের দিন বুধবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, আর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নাজমুল হক জানান, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের কাছাকাছি এসে গেছে। ধীরে ধীরে সেটা বরিশাল ও ঢাকা হয়ে আরও উত্তরে যাবে। আর মৌসুমি বায়ু এলেই বলা যাবে দেশে বর্ষকাল শুরু হয়েছে।
গত কয়েকদিন গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত হলেও জীবিকার তাগিদে দিনভর রাইড শেয়ারে বাইক চালিয়েছেন মাহফুজুর রহমান। বৃহস্পতিবার তাপ কিছুটা কমায় আর সবার মত তিনিও খুশি।
মাহফুজুর বলেন, “লাস্ট কয়েকটা দিন বাইক চালাইতে এত কষ্ট হইছে, তা বলার মত না। রোদের যে কি তাপ! আজ গরম পুরোপুরি না গেলেও এই বৃষ্টিতে শান্তি লাগতেছে। অন্তত রোদ তো গায়ে লাগে না।”
আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক বলেন, বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় অস্বস্তিকর গরম গেছে কয়েক দিন।
“জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি হলে ঘাম হয় বেশি। যদি বৃষ্টিটা পর্যাপ্ত হত, এখন আকাশে যে মেঘটা দেখা যাচ্ছে, সেটা কেটে যেত। সেক্ষেত্রে তাপমাত্রা আরও কমত।”
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোণা ও সিলেট জেলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে অব্যাহত থাকতে পরে।
চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায়, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। আগামী পাঁচ দিনে বৃদ্ধির প্রবণতা বাড়তে পারে।
এদিকে বর্ষা আগমনের আগে বঙ্গোপসাগরে ‘গভীর সঞ্চালণশীল’ মেঘমালা তৈরি হতে থাকায় উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।
সে কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, “এইসময় প্রতিবছরই সাগরে একটা মৌসুমি নিম্নচাপ হয়। এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।”
জুন মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে; এরমধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। দেশে ৪ থেকে ৬ দিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় হতে পারে। এছাড়া জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে সারাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করবে।