ঢাকাবুধবার , ৯ আগস্ট ২০২৩
  1. আন্তর্জাতিক
  2. ইতিহাস ঐতিয্য
  3. ইসলাম
  4. কর্পোরেট
  5. খেলার মাঠে
  6. জাতীয়
  7. জীবনযাপন
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. নারী কন্ঠ
  11. প্রেস বিজ্ঞপ্তি
  12. ফার্মাসিস্ট কর্নার
  13. ফিচার
  14. ফ্যাশন
  15. বিনোদন

ক্লিওপেট্রা: প্রাচীন মিসর এবং ইতিহাসের এক বিস্ময়কর নাম!

ডেস্ক নিউজ
আগস্ট ৯, ২০২৩ ৬:০২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

“ক্লিওপেট্রা” ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত নারী। আধুনিক ইতিহাসবিদদের মতে, পরমাসুন্দরী হিসেবে তার খুব বেশি খ্যাতি ছিল না। কিন্তু তীক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তা, অন্যকে বশ করার প্রত্যয়ী ক্ষমতা, সহজাত রসবোধ এবং প্রচণ্ড উচ্চাভিলাষ ও তা বাস্তবায়নের অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি সর্বকালের সেরা মহিলাদের কাতারে স্থান করে নিয়েছেন। তাকে মনে করা হয় সম্মোহনী সৌন্দর্য আর সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে এবং সীমিত শক্তিকে অসাধারণ কৌশলে অসীমে নিয়ে যাওয়ার রূপকার হিসেবে।
প্রেম আর মৃত্যু এই নারীর জীবনে একাকার হয়ে গেছে। তিনি যেমন ভালোবাসার উদ্যাম হাওয়া বইয়ে দিতে পারতেন, তেমনি প্রয়োজনে মারাত্মক হিংস্রও হতে পারতেন। পথের কাঁটা মনে করলে যে কাউকে নির্মমভাবে সরিয়ে দিতে পারতেন। আর তাই শত বছর পরও তাকে স্মরণ করা হয়।
মাত্র ৩৯ বছর তিনি বেঁচে ছিলেন। এই স্বল্প সময়েই তিনি একের পর এক নাটকীয় ঘটনার সৃষ্টি করেন। সে যুগের কোনো পুরুষের পক্ষেও যে ধরনের কাজ করা ছিল প্রায় অসম্ভব, তিনি সেসব কাজেরও আঞ্জাম দিয়েছেন।
মিসরের রানী ছিলেন তিনি। অথচ তার দেহে খাঁটি মিসরীয় রক্ত ছিল না। অবশ্য তবুও তিনি মিসর এবং মিসরীয়দের ভালোবাসতেন। তাদের উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ করেছেন। চাষাবাদের সুবিধার জন্য নীল নদ থেকে খাল কেটে আলেক্সান্দ্রিয়ার ভেতরে নিয়ে গিয়েছিলেন। মিসরের ব্যবসায়-বাণিজ্যের উন্নয়নেও ভূমিকা রেখেছেন। প্রাণবন্ত এই রাজকুমারী সহজেই সবার প্রশংসার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মিসরীয়সহ তিনি মোট ৯টি ভাষা জানতেন। গণিতবিদ ও ব্যবসায়ী হিসেবেও তার সুনাম ছিল। রাজনৈতিক কারণে তিনি নিজেকে সূর্যদেবতা ‘রা’-এর বংশধর হিসেবে প্রচার করতেন এবং দেবী আইসিসের শিরোস্ত্রাণ পরতেন। সাহিত্য ও দর্শনে তার প্রবল অনুরাগ ছিল। তার চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল রোমের আওতার বাইরে থেকে প্রথম টলেমি প্রতিষ্ঠিত পুরো এলাকার রাজ ক্ষমতা লাভ করা। তাই তাকে বলা যায়, রোম সাম্রাজ্য বিস্তারের একটি বাধা হিসেবে।**

সাধারণভাবে তিনি ক্লিওপেট্রা সপ্তম হিসেবে পরিচিত। মেসিডোনিয়ান বংশোদ্ভূত সপ্তম মিসরীয় রানী হওয়ায় তাকে এই পরিচিতি বহন করতে হয়। তার আগে আরো ছয়জন কিওপেট্রা ছিলেন। তিনি ছিলেন টলেমি দ্বাদশের তৃতীয় মেয়ে। তিনি জন্মগ্রহণ করেন খ্রিষ্টপূর্ব ৬৯ সালে। তিনি জুলিয়াস সিজারের প্রেমিকা ও মার্ক অ্যান্টনির স্ত্রী হিসেবেই বেশি খ্যাত। তার পূর্বপুরুষ টলেমি ছিলেন মহামতি আলেক্সান্ডারের একজন সেনাপতি। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩ সালে আলেক্সান্ডার মারা গেলে তার অন্যতম সেনাপতি টলেমি মিসরে স্বাধীন রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। কিওপেট্রা এই বংশেরই শেষ শাসক ছিলেন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মিসরে প্রায় ৩০০ বছরের মেসিডোনিয়ান শাসনের অবসান ঘটে।
ক্লিওপেট্রার প্রেম আর যুদ্ধের কাহিনী শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৫১ সালে পিতা টলেমি আওলেটেস মারা যাওয়ার পর। এ সময়ে ক্লিওপেট্রার বয়স হয়েছিল ১৮ বছর। টলেমি আওলেটেস তার উইলে কিওপেট্রাকে তার ছোট ভাই টলেমি ত্রয়োদশের (সে সময় তার বয়স ছিল ১২ বছর) সাথে উত্তরসূরী মনোনীত করেন। ধারণা করা হয় কিওপেট্রার বড় দুই বোনের একজন (ক্লিওপেট্রা ষষ্ঠ) শৈশবেই মারা গিয়েছিলেন ও অপরজনকে (বেরেনিস) টলেমি আওলেটেসই হত্যা করেছিলেন। এ ছাড়া কিওপেট্রার ছোট আরো দু’টি ভাই ছিল।
খ্রিষ্টপূর্ব ৫১ সালে পিতার মৃত্যুর পর তিনি ভাই টলেমি ত্রয়োদশের সাথে যৌথভাবে মিসরের শাসক হন (খ্রিষ্টপূর্ব ৫১-৪৭)। সে কালে মিসরে ভাই-বোন বিয়ে প্রচলিত ছিল (মিসরের আইন অনুযায়ী ভাই বা পুত্র যেকোনো একজনকে অংশীদার করতেই হতো, এ ক্ষেত্রে বয়স কোনো ব্যাপারই নয়)। তাই ক্লিওপেট্রা একাধারে ছিলেন সম্রাটের বোন ও স্ত্রী। তবে দু’জনের মধ্যকার সুসম্পর্ক স্থায়ী হয়নি। কিছু সময় পরেই দু’জনের মধ্যকার সম্পর্কে ফাটল ধরে। ক্লিওপেট্রা সব সরকারি দলিলপত্র থেকে তার ভাইয়ের নাম মুছে ফেলতে থাকেন। এমনকি মুদ্রায় তার একক পোর্ট্রেট ও নাম সংযোজন করেন। তবে তিনি টিকতে পারেননি। দেশে বিশৃঙ্খলা, দুর্ভি, প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের ফলে কিওপেট্রাকে মতা থেকে সরে যেতে হয়। কিন্তু তিনি দমে যাননি। ধারণা করা হয় বোন আরসিনোইকে নিয়ে আরব সৈন্যদের সহায়তায় তিনি সিরিয়ায় চলে যান এ সময়।

**খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮ সালে রোমের অধিপতি জুলিয়াস সিজার তার প্রতিদ্বন্দ্বী পম্পেইর পিছু ধাওয়া করতে করতে মিসরে উপস্থিত হন। পম্পেই আশা করেছিলেন মিসরে তিনি আশ্রয় পাবেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছার অব্যবহিত পরেই তিনি নিহত হলেন। এর চার দিন পর সিজার বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে মিসরে পৌঁছলেন। মিসর-সম্রাট টলেমি তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেননি।
ক্লিওপেট্রা পুরো ঘটনাবলির ওপর তীক্ষ্ম নজর রাখছিলেন। তিনি সুযোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি দেখলেন সিজার শক্তিশালী এবং সেই সাথে একনায়ক। সবচেয়ে বড় কথা তার ওপর নির্ভর করা যায়। তার সহায়তায় ক্লিওপেট্রা আবার রাজক্ষমতা ফিরে পাওয়ার উদ্যোগ নেন। এ সময় সিজারের চাহিদা ছিল সম্পদের। আর কিওপেট্রার ক্ষমতা। দু’জন দু’জনের পরিপূরক হিসেবে অবস্থান নিলেন। এতে দু’জনই লাভবান হলেন।
সিজারের সাথে ক্লিওপেট্রার সাক্ষাতের ঘটনাটিও বেশ আকর্ষণীয়। আলেক্সান্দ্রিয়ায় রাজপ্রাসাদে সিজারের পাহারায় ছিল কিওপেট্রার স্বামী-ভাইয়ের বাহিনী। ফলে পরিচয় প্রকাশ করে সিজারের কাছে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাও ছিল না। তাই কৌশল গ্রহণ করলেন। এক ব্যবসায়ীকে হাত করলেন। এক দিন সিজারের সামনে রোল করা কয়েকটি কার্পেট আনা হলো। একে একে খোলা হলো সিজারের সামনে। সেগুলোরই একটির ভেতর থেকে নাটকীয়ভাবে বেরিয়ে এলেন ক্লিওপেট্রা। তার বুদ্ধিমত্তা আর সৌন্দর্যে ভেসে গেলেন রোমান সম্রাট। কী ঘটতে যাচ্ছে টলেমি ত্রয়োদশ ঠিকই বুঝতে পারলেন। তিনি নগরবাসীকে বুঝানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু এবারো ব্যর্থ হলেন। পরিণতিতে তাকে নীল নদে ডুবিয়ে দেয়া হলো।
অবশ্য তার আগে থেকেই মিসরের ব্যাপারে রোমান শাসকেরা নাক গলাতে শুরু করেছিল। কিওপেট্রার পিতা রোম সম্রাটের সাহায্যে ক্ষমতা পুনর্দখল করেছিলেন। অনেকের মতে, সিজার চেয়েছিলেন ক্লিওপেট্রাকে মিসরে রোমের বশংবদ হিসেবে রাখতে। সমঝোতা হিসেবে কিওপেট্রা তার অপর ভাই টলেমি চতুর্দশকে (এই সময় তার বয়স ছিল ১১ বছর) বিয়ে করেন (তা স্থায়ী হয়েছিল ৪৭-৪৪ খ্রিষ্টপূর্ব পর্যন্ত)। এই বিয়েটা হয়েছিল আলেক্সান্দ্রিয়াবাসী ও মিসরের পুরোহিতদের খুশি রাখতে। কারণ বিয়ে সত্ত্বেও একই সাথে তিনি সিজারের ১৫ দিন মিসরে অবস্থানকালে তার প্রেমিকা হিসেবেও বহাল থাকেন। চাঁদনি রাতে বজরায় করে দুইজনে নীলনদে ভেসে বেড়ান। সিজারের এক পুত্রসন্তানের জন্মও দেন তিনি। তার নাম রাখা হয় সিজারিয়ান (ছোট সিজার বা টলেমি সিজার)। সে-ই ছিল সিজারের একমাত্র পুত্র। রোমে অবস্থিত সিজারের স্ত্রীর কোনো পুত্রসন্তান ছিল না। পরে এই সিজারিয়ানের সাথে কিওপেট্রা আবার মিসরের রাজমতা পরিচালনা করেন (খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪-৩০)।
পম্পেই এবং অন্যান্য শত্রু দমন করতে সিজারের কয়েক বছর কেটে যায়। তবে দু’জনের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। কিওপেট্রা প্রায়ই সিজারের সাথে সাক্ষাৎ করতে যেতেন। আসলে তিনি রোমান শাসকদের সাথে সুসম্পর্ক রেখেই মিসরের স্বাধীনতা বজায় রাখতে চাইতেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ সালে সিজারের অনুরোধে ক্লিওপেট্রা পুত্র এবং তার স্বামী-ভাইকে নিয়ে রোমেও যান তার জয়োল্লাস প্রত্যক্ষ করতে। রোমে সিজার কিওপেট্রাকে অত্যন্ত সম্মানিত আসন দান করেন। এমনকি ভেনাসের মন্দিরে ক্লিওপেট্রার একটি স্বর্ণমূর্তিও স্থাপন করা হয়। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, সিজারিয়ান তার ছেলে। কিন্তু এসব কিছু রোমানদের ভালো লাগেনি। এমনকি তারা মনে করতে থাকে সিজার হয়তো ক্লিওপেট্রাকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন, যদিও রোমান আইনে একই সাথে দুই স্ত্রী রাখা কিংবা বিদেশিনী বিয়ে করা নিষিদ্ধ। তা ছাড়া জুলিয়াস সিজার রাজধানী আলেক্সান্দ্রিয়ায় সরিয়ে নিতে চান বলেও গুজব ছড়ানো হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪ সালে তার রোমে অবস্থানের সময়েই সিনেট ভবনের বাইরে সিজার সিনেটরদের হাতে নিহত হন মাত্র ৫৫ বছর বয়সে। সিজারের আকস্মিক মৃত্যুতে ক্লিওপেট্রার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা লাভের প্রথম প্রয়াস ব্যর্থ হয়। কারণ সিজার ক্লিওপেট্রা কিংবা সিজারিয়ানকে তার উত্তরসূরী মনোনীত করে যেতে পারেননি।
ক্লিওপেট্রা মিসরে ফিরে আসেন। রোমান রাজনীতিতে তিনি নিরপেক্ষ থাকার নীতি অবলম্বন করেন। তবে রোমান রাজনীতির ওপর তীক্ষ্ন নজর রাখছিলেন। তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন, যে-ই চূড়ান্তভাবে জয়ী হবে, তিনি থাকবেন তার পাশে। অযথা কাউকে শত্রু বানিয়ে লাভ কী! পরবর্তী রাউন্ডের জন্য তিনি অপোয় থাকলেন। যা-ই হোক, দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৪২ সালে। প্রতিদ্বন্দ্বী অল্প বয়স্ক গেয়াস অক্টাভিয়াসকে বেকায়দায় রেখে এ সময় মার্ক অ্যান্টনি হন রোমের শাসক। অ্যান্টনির সাথে ক্লিওপেট্রার আগেই সামান্য পরিচিতি ছিল। ক্লিওপেট্রা আবার পরিকল্পনা করেন, রোমান শক্তি দিয়েই রোমকে রুখতে হবে।

রোমের শাসনক্ষমতা পেয়েই অ্যান্টনি অন্যান্য রোমান জেনারেলের মতো পারস্য অভিযান শুরুর উদ্যোগ নেন। সুযোগটি নিলেন ক্লিওপেট্রা। অ্যান্টনি ছিলেন বিবাহিত। তার স্ত্রী ফুলভিয়া ইতালিতে অবস্থান করে স্বামীর প্রতিদ্বন্দ্বীদের নানাভাবে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ক্লিওপেট্রার ছলাকলায় মুগ্ধ হয়ে সব কিছু ভুলে গেলেন অ্যান্টনি। ক্লিওপেট্রা নিজে উদ্যোগী হয়ে জাঁকজমকভাবে এশিয়া মাইনরের টারসাসে তার কাছে যান। একজন পরাক্রমশালী জেনারেল হওয়া সত্ত্বেও অ্যান্টনি ছিলেন উচ্ছৃঙ্খল, আসঙ্গলিপ্সু এবং ছটফটে চরিত্রের মানুষ। ক্লিওপেট্রা তার চরিত্রের এই দিকটি জেনে নিলেন এবং নিজের স্বার্থে তা ভালোভাবেই কাজে লাগালেন। নিজের ক্ষমতায় তিনি ছিলেন যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। এ সময় তার বয়স ছিল ২৮ কি ২৯ বছর। সুন্দরী মেয়েদের বাওয়া রুপার পাতে মোড়া নৌকার গলুই, মুক্তা ও রত্নরাজিতে পাল সাজিয়ে প্রেমের দেবী আফ্রোদিতির সাজে আধশোয়া ক্লিওপেট্রা যখন মার্ক অ্যান্টনির কাছাকাছি পৌঁছালেন, অ্যান্টনি নিজেকে সংবরণ করতে পারেননি। রোম সম্রাট অ্যান্টনি পারস্য অভিযান বাদ দিয়ে কিওপেট্রার ‘কেনা গোলাম’ হিসেবে তার সাথে আলেক্সান্দ্রিয়ায় (মিসরের তদান্তীন রাজধানী) যান। ক্লিওপেট্রা অ্যান্টনিকে বশে বা ভুলিয়ে রাখার জন্য সম্ভব সব কিছু করেন। ক্লিওপেট্রার মোহে বন্দী রোমান সম্রাট অ্যান্টনি ঘোষণা করেন, ”মিসর রোমের করদরাজ্য নয়, বরং মিসর স্বাধীন একটি দেশ আর কিওপেট্রা এ দেশের রানী।”
এভাবে বেশ কিছু দিন তারা একত্রে কাটান। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০ সালে তিনি(অ্যান্টনি) রোমে তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী অক্টাভিয়াসের সাথে বোঝাপড়া করার উদ্যোগ নেন। এই উদ্যোগ সাময়িকভাবে সফল হয়। সমঝোতা হিসেবে অ্যান্টনি প্রতিদ্বন্দ্বী অক্টাভিয়াসের (পরে সম্রাট অগাস্টাস হিসেবে পরিচিত) বিধবা বোন অক্টাভিয়াকে বিয়ে করেন (এর কিছু দিন আগে তার আগের স্ত্রী ফুলভিয়া মারা গিয়েছিল)। সুন্দরী ও বুদ্ধিমতী হওয়া সত্ত্বেও অক্টাভিয়ার দুর্ভাগ্য, তার সন্তান হয় কন্যা। পুত্র হলে ইতিহাস অন্য হতে পারত। যা-ই হোক, তিনি তিন বছরের মধ্যে বুঝতে পারলেন, অক্টাভিয়াসের সাথে তার সম্প্রীতি টিকবে না। তাই বিকল্প ভাবতে থাকলেন। এ সময় ক্লিওপেট্রাও চুপচাপ বসে ছিলেন না। তিনিও আরেকটি খেলায় মেতে উঠেছিলেন। তিনি রোমের আরেকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হেরোডকে বশ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে সফল হননি।
এ দিকে ক্লিওপেট্রার জন্য অ্যান্টনির মন উতলা হয়ে ওঠে। তাই তিনি মিসরে ক্লিওপেট্রার সান্নিধ্যে চলে আসেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৬ সালে তারা বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। এটি ছিল একটি চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী ঘটনা। ইতোমধ্যে জন্ম নেয়া ক্লিওপেট্রার দুই জমজ সন্তানকে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে অ্যান্টনি স্বীকৃতি দেন। এটা এক দিকে অক্টাভিয়াস ও তার বোন অক্টাভিয়ার জন্য ছিল একটি অত্যন্ত অসম্মানজনক আঘাত। আবার রোমান আইন অনুযায়ী এই বিয়ে ছিল অবৈধ। তাই পুরো রোম অক্টাভিয়াসের সাথে একজোট হয়। তারা ঐক্যবদ্ধভাবে অ্যান্টনিকে দমন করতে অগ্রসর হয়। অক্টাভিয়াস-অ্যান্টনি যুদ্ধ অপরিহার্য হয়ে ওঠে। অ্যান্টনিও ৩১ সালে অক্টাভিয়াকে চূড়ান্তভাবে তালাক দেন।
তবে ক্লিওপেট্রাকে খুশি করতে এবং সেই সাথে আলেক্সান্দ্রিয়াকে কেন্দ্র করে নতুন সাম্রাজ্য গড়ার দিকেও অ্যান্টনি নজর দেন। ৩৪ সালে তিনি মিসর, সাইপ্রাস, ক্রিট, সিরিয়ার শাসনক্ষমতা কিওপেট্রাকে দান করেন। কিন্তু বেশি দিন শান্তিপূর্ণভাবে এই ক্ষমতা ভোগ করতে পারেননি।
খ্রিষ্টপূর্ব ৩২-৩১ সালে অ্যান্টনি-ক্লিওপেট্রা প্রতিকূলতার মধ্যেও গ্রিসে অবস্থান করেন। এ দিকে অক্টাভিয়ান অ্যান্টনিকে হারিয়ে রোমের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পেতে সর্বাত্মক প্রয়াস শুরু করেন। অক্টাভিয়ান খ্রিষ্টপূর্ব ৩১ সালে চূড়ান্ত অভিযান চালনা করেন। গ্রিসের দক্ষিন উপকূলে অনুষ্ঠিত হয় এই যুদ্ধ। অ্যান্টনি ছিলেন স্থলযুদ্ধে পারদর্শী। কিন্তু কিওপেট্রার পরামর্শেই তিনি নাকি নৌযুদ্ধে নেমেছিলেন। নৌযুদ্ধের অত্যন্ত সন্ধিক্ষণে কিওপেট্রা হঠাৎ করেই তার বাহিনী প্রত্যাহার করে নেন। কেন তিনি এই বাহিনী সরিয়ে নিয়েছিলেন, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে এর ফলে যুদ্ধে অ্যান্টনি পরাজিত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে আসে। এই যুদ্ধের মাধ্যমে অক্টাভিয়ান রোমের সম্রাট হন। আর অ্যান্টনির সব ক্ষমতা শেষ হয়ে যায়। সেই সাথে ক্লিওপেট্রার কাছে অ্যান্টনি মূল্যহীন হয়ে পড়লেন। ক্লিওপেট্রাও নতুন চাল শুরু করেন। এবার তার সব পরিকল্পনা রচিত হতে থাকে অক্টাভিয়াসকে তার মায়াজালে বন্দী করতে। কিন্তু এখানেই তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি করেন। পরিণতিতে তিনি জীবন পর্যন্ত খোয়ান।
তিনি বুঝতে পারলেন, অক্টাভিয়াসকে হাত করতে হলে অ্যান্টনিকে বাদ দিতে হবে। অথচ অ্যান্টনিকে হত্যা করার বা মিসর থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার কোনো ক্ষমতা তখন তার নেই। তাই সে যাতে আত্মহত্যা করতে উদ্বুদ্ধ হয় তিনি সেই পথ বের করলেন। ভাবলেন, এতে অনায়াসেই তিনি তার স্বার্থ হাসিল করতে সক্ষম হবেন। কিওপেট্রা এক দিন নিজের সুরতি মন্দিরে অবস্থান নিয়ে প্রচার করে দেন, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর খবর পেয়ে অ্যান্টনির বেঁচে থাকার সব ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেন। তিনি তার তরবারি নিজের বুকে বিদ্ধ করেন। কিন্তু পরক্ষণেই তিনি বুঝতে পারলেন, তিনি ভুল শুনেছেন বা তাকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে তার পরপারের ডাক চলে এসেছে। তবে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে কিওপেট্রার কাছে নেয়া হয়। তিনি তার কোলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১০ মাস পরে বিজয়ী অক্টাভিয়াস আলেক্সান্দ্রিয়ায় আসেন। এ সময় ক্লিওপেট্রা অক্টাভিয়াসকে সম্মোহিত করতে চাইলেন। আগে তিনি দু’বার দুই দোর্দণ্ড শক্তিশালী সম্রাটকে নিজের মায়াজালে মোহিত করে কব্জায় এনেছিলেন। কিন্তু তৃতীয়বার পুরোপুরি ব্যর্থ হন। তবে অক্টাভিয়াস চাইছিলেন, যেভাবেই হোক ক্লিওপেট্রাকে জীবিত ধরতে হবে। তাই তিনি তাকে নানা আশ্বাস দিচ্ছিলেন। অক্টাভিয়া নিজেও জানতেন, তিনি যদি কিওপেট্রার চোখের দিকে তাকান, তবে সাথে সাথে তার সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাই তিনি ক্লিওপেট্রার সাথে কথা বলার সময় সর্বক্ষণ চোখ রেখেছিলেন মেঝের দিকে। তাই ক্লিওপেট্রা বুঝতে পারলেন এই রোমান সম্রাটকে বশ করা যাবে না। তার মনে হলো অক্টাভিয়াস বুঝি তাকে লাঞ্ছিত করবে। হয়তো মিসর বা রোমের রাজপথে যুদ্ধলব্ধ সামগ্রী হিসেবে তাকে ও তার সন্তানদের লোহার শিকল পরিয়ে প্রদর্শন করবে। এটা মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি।
অপমানের আশঙ্কায় তিনি ভেঙে পড়েন। এই অপমানের চেয়ে মৃত্যুই তার কাছে শ্রেয় মনে হলো। তাই তদানীন্তন রাজকীয় প্রথা হিসেবে বিষধর এক বিশেষ ধরনের সাপের (অ্যাস্প্ নামের এই সাপ হয় মাত্র কয়েক ইঞ্চি লম্বা, অথচ তাদের বিষ মারাত্মক। ডুমুরের ঝুড়িতে করে বিশেষ ব্যবস্থায় আনা হয়েছিল সাপ দু’টি) ছোবলে আত্মহত্যা করেন। ওই সময়ে মিসরে মনে করা হতো সাপের কামড়ে মারা যাওয়া মানুষ অামরত্ব লাভ করে। তাই ক্লিওপেট্রা ওই পথই বেছে নিলেন। দিনটি ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৩০ সালের ৩০ আগস্ট।
অ্যান্টনি ও ক্লিওপেট্রা দু’জনকেই রোমে সমাহিত করা হয়।
৩৯ বছরের জীবনে তিনি ২২ বছর রানী এবং ১১ বছর অ্যান্টনির সাথী ছিলেন। তাকে যৌন বিকৃতিগ্রস্ত মহিলা হিসেবে কোনোভাবেই চিহ্নিত করা যায় না। কারণ সিজার ও অ্যান্টনি ছাড়া অন্য কোনো পুরুষকে দেখা যায় না তার প্রেমিক হিসেবে। তা ছাড়া তিনি তাদের দু’জনকেও একসাথে কাছে টানেননি। তিনি মিসরকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন যেকোনো মূল্যে।
অনেকে মনে করেন, তার উচ্চাভিলাষ কিছুটা কম হলে তিনি আরো অনেক বেশি ক্ষমতা পেতেন এবং তা বেশি দিন উপভোগ করতে পারতেন। নারী হয়েও পুরুষের একচ্ছত্র প্রাধান্য স্বীকার করেননি। সাম্রাজ্যবাদকেও মেনে নেননি। “তিনি রাজকন্যা হিসেবে জন্মেছিলেন, মারা যান রানী হিসেবে।”
” তবে প্রেমিকা নাকি ক্ষমতালিপ্সু কোনটায় তিনি বড় ছিলেন তিনি তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে।”

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো । বিডিসারাদিন২৪'এ প্রকাশিত নারীকন্ঠ,মতামত লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত বিডিসারাদিন২৪ 'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় বিডিসারাদিন২৪ কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। বিডিসারাদিন২৪ 'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।