বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অশ্লীলতা ব্যতীত অন্য কিছুর চর্চা নেই!
- আপডেট সময় : ১০:৪২:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ মে ২০২৩
- / ৫০১০ বার পড়া হয়েছে
‘কুত্তার বাচ্চা ফুটফুটে সুন্দর’ গানটির লেখক কুয়াশা মুর্খ, গায়ক ফকির সাহেব গানটি উপস্থাপন করেছেন মূলত বোবা প্রাণী কুকুরের বিশ্বস্ততা, সরলতা, নিষ্পাপ কুকুরের প্রতি মায়া প্রকাশে। একইসাথে গানটি অসৎ ব্যক্তি/মানুষের কর্ম এবং কুকুরের মধ্যে তফাৎ করে বুঝানো হয়েছে কুকুর ঐসব মানুষের তুলনায় ভালো, লয়াল এবং কারোর কোন ক্ষতি করে না৷
অথচ, আমাদের প্রজন্ম করলো কি? গানটিকে তারা একরকম গালি হিসেবে সর্বত্র ব্যবহার করে বেড়াচ্ছে।
সম্প্রতি কোক স্টুডিও বাংলার প্রিতম হাসানের দেওরা গানটি বেশ জনপ্রিয় হয়। গানটিতে একটি লাইন হলো – ‘হাত ছাইরা দ্যাও সোনার দ্যাওরা রে’!
এই গান ও লাইটিকে আমাদের প্রজন্ম ধরে নিয়েছে অশ্লীলতা হিসেবে। অথচ এই গানটি নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করেই মূলত তৈরি হয়েছে।
দীর্ঘক্ষণ এক টানা বাইচের নৌকায় বৈঠা চালাতে হলে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন পড়ে। মূলত গ্রামের তরুন এবং জোয়ানরাই এই কাজ করেন। নৌকা বাইচ দেখতে সব বয়সী মানুষের সাথে গ্রামের ভাবীরাও আসে। তো এক টানা বৈঠা বাইতে বাইতে যখন হাত ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে, তখন দেবর বলছে – ‘হাতে লাগে ব্যাতা রে’। আর ভাবী বলছে – ‘হাত ছাইরা দ্যাও সোনার দ্যাওরা রে’।
অথচ, আমাদের জেনারেশন গানটার সারমর্ম চিন্তা করেছে এমন – ‘খারাপ উদ্দেশ্যে ভাবীর হাত ধরেছে দেবর, তাই ভাবী হাতে ব্যথা পেয়েই হাত ছেড়ে দিতে বলছে’! বুঝেন অবস্থা?!
নিউজে দেখলাম – টেলিগ্রামে বাংলাদেশী তরুণদের সোয়া ৪ লাখ সদস্যদের একটা গ্রুপ আছে, যারা মেয়েদের অনুমতিহীন ন্যুড ভিডিও ধারণ/সংগ্রহ করে সেগুলো অন্যের কাছে বিক্রি করতো, আবার সেসব দিয়ে ব্লাকমেইল করে অর্থ আত্মসাৎ করতো। চক্রটি ইন্টারনেটে ছড়িয়েছে ২০ হাজার আপত্তিকর ভিডিও এবং ৩০ হাজার ছবি।
যাইহোক। এই তো গেলো মাত্র ৪ লাখ সদস্যের কথা।
মাত্র ২০ বছর আগেও পিছিয়ে থাকা আজকের চীনের ইয়াং জেনারেশন যখন জ্ঞান বিজ্ঞান, শিক্ষা গবেষণায়, তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্বকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে; তখন আমাদের দেশের ইয়াং জেনারেশনের কাজ কি জানেন?
লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন – কে কার সাথে শুইলো, কে কার সাথে গেলো, কে কাকে জড়িয়ে ধরলো, কার সাথে কার ভাব হইলো, এগুলোই আমাদের দেশের মানুষ, জোয়ান, বৃদ্ধ সব বয়সীদের আলোচ্যের বিষয়। এসব লাইক শেয়ার কমেন্ট করে দেশের প্রায় প্রতিটা ছেলেমেয়েই যেনো একরকম পৈশাচিক আনন্দ পায়!
চায়নিজ শিক্ষার্থীরা যখন AI নিয়ে আমেরিকার সাথে প্রতিযোগিতা করছে, তখন আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা কার ন্যুডস ফাঁস করা যায় সেটা নিয়ে প্রতিযোগিতায় রয়েছে। চায়নিজ ছেলেমেয়েরা যখন মহাকাশে/মঙ্গল গ্রহে পৌঁছে গেছে, তখন আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা অন্যের কাপড়ের নিচ থেকেই বেরুতে পারেনি। চিন্তা করেছেন – আমাদের দৌঁড়, আমাদের রুচিবোধ, আমাদের ভিশন/মিশন কোথায় আটকে গেছে? আমরা কোথায় আর তারা কোথায়?!
বিশ্বে কতকি ঘটে যাচ্ছে, কতকি আবিষ্কার হচ্ছে, সমগ্র বিশ্বে AI, Robot, Machine Learning নিয়ে তমুল আলোচনা চলছে। AI platform সম্পূর্ণ ইম্প্রুভ করলে বিশ্বে কাজ হারাবে প্রায় ৩০-৫০ কোটি মানুষ।কিছু কি ভাবা যায়? এরসঙ্গে তাল মিলাতে আমরা কি করছি?!
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে হওয়ার কথা বিশ্বমানের। দেশে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী দুটাই বেড়েছে, অথচ আমরা অন্যের কাপড়ের নিচ থেকেই এখনো বেরুতে পারিনি, বিশ্বমঞ্চে ঠিক পৌঁছাবোই বা কিভাবে? কারোর মধ্যেই তথ্য প্রযুক্তি, জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে কোন আলোচনাই নেই!
- বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অশ্লীলতা ব্যতীত আর কোন কিছুর চর্চা নেই!
zahirul alam siddiqu